launchora_img

ঘুম

Info

 “Philosophy is the study of the fundamental nature of knowledge, reality, and existence, especially when considered as an academic discipline.” এই বলে থামলেন রজনীবাবু। সাথে সাথে ঘণ্টা বাজার আওয়াজ হলো, আর তিনি দেখলেন ছাত্রছাত্রী সবাই ব্যাগপত্র গোছাতে শুরু করে দিয়েছে। তিনিও তার ব্যাগটা হাতে নিয়ে চুপচাপ ধীরে ধীরে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে গেলেন। ঘড়িতে তখন দুপুর ৩টে। আজ আর কোন ক্লাস নেই, তাই ব্যাগ থেকে ছাতাটা বের করে বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। আজ রোদটা অন্যদিনের তুলনায় অনেক বেশী উঠেছে মনে হচ্ছে। প্রকৃতির তপ্ত শাসানির জন্য রাস্তা জনশূন্য। কলেজ থেকে মাত্র ১০ মিনিট হাঁটা দূরত্বে তার বাড়ি, তাতেই বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে ঘামে জামাকাপড় সব ভিজে গেল! কাঠফাটা রোদে এতো রোদে হেঁটে আসার জন্য আজ একটু বেশীই ক্লান্ত হয় পরেছেন, রোদ ও বয়সের চাপে বুকে হালকা হালকা ব্যাথাও করছে। তাই ফিরে কোনোরকমে জামাকাপড় বদলেই বিছানায় শুয়ে পরলেন আর ক্লান্তির জন্য সাথে সাথেই তিনি ঘুমের ঘোরে ঢুলে পড়লেন। কলিং বেলের আওয়াজে ঘুম ভাঙল তার। উঠে দরজা খুলে দেখলেন হোম ডেলিভারীর খাবার দেওয়ার ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। রাত্রে খাবার খেয়ে অসম্পূর্ণ ঘুমটা সম্পূর্ণ করার জন্য আবার বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন।

এই হলো রজনীবাবুর প্রতিদিনের রুটিন। রজনীবাবু, পুরো নাম রজনীকান্ত মুখার্জি, শহরের নাম করা কলেজের দর্শনশাস্ত্রের অধ্যাপক। কাজের সূত্রে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে শহরে এসে থাকেন। কলেজের বাইরে সারাক্ষণ দর্শনের আজব আজব চিন্তা নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন বলে পাড়ার সবাই তাকে পাগল মনে করে, তাই কেউ কথা বলেনা তার সাথে। এখন যেমন মানুষের মৃত্যু পরবর্তী অবস্থা সম্বন্ধে ভাবনাচিন্তা করছেন, এরকম চিন্তাধারা থাকলে তাকে পাগল মনে করাটাই সাভাবিক। তার বাড়িটাও পাড়ার লোকেদের কাছে ‘পাগলা বুড়োর বাড়ি’ নামে পরিচিত। কলেজেও কেউ তার সাথে সেরকম কথা বলেনা। এই একই কারণে তার বিয়েও করা হয়ে ওঠেনি, যদিও তিনি এই নিঃসঙ্গ জীবনেই তিনি অভ্যস্ত ও সন্তুষ্ট। তিনি নিজের ভাবনাগুলো নিয়েই মেতে থাকেন সারাক্ষণ। বাইরের লোক বলতে ওই খাবার দিতে আসা ছেলেটাই তার ও বাইরের জগতের মধ্যে একমাত্র যোগসূত্র। তার সাথেই নিজের সকল ভাবনাচিন্তা ভাগ করে নেন। ছেলেটিও তার কথা মন দিয়ে শোনে, তার ভালই লাগে এসব গল্প শুনতে।

কিন্তু সেই রাতটা একটু অন্যরকম কাটলো তার। অনেকদিন পর নিজের গ্রামের বাড়ি, আপনজনেদের নিয়ে স্বপ্ন দেখলেন রাত্রে। দেখলেন সেই বিস্তীর্ণ মাঠ, ওপরে শরতের নীল সাদা আকাশ, দেখলেন ছোটবেলার বন্ধু অর্ককে। তার সাথে গ্রামের মাঠে ছুটে বেরাছে ছোট্ট রজনী, তাদের হাতে একটা করে লাঠি আর সামনে সাইকেলের টায়ার। টায়ারটাকে ওই লাঠিটা দিয়ে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে মাঠের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার এই খেলাটা ওরা দুজনে খুব খেলত। এমন সময়ে তার নাম ধরে একটা মহিলা কণ্ঠ পাওয়া গেল। তার মা তাকে খাবারের জন্য ডাকতে এসেছে। আজ তার জন্মদিন, তাই তার জন্য তার মা পায়েস রান্না করেছে। মায়ের হাতে বানানো পায়েস খেতে তার খুব ভালো লাগত। এসব দেখতে দেখতে ঘুমের মধ্যেই তার চোখ থেকে কয়েকফোঁটা জল বেড়িয়ে গেল। অনেকদিন পর তিনি নিঃসঙ্গতা অনুভব করলেন।

স্বপ্নে ছোট থেকে বড়ো হতে হতে ঘুম থেকে উঠতে তার অনেক দেরী হয়ে গেল। ঘুম থেকে উঠে দেখলেন ঘড়িতে সকাল ১১টা বেজে গেছে। তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়লেন। খাবার দিতে আসা ছেলেটি মনে হয় আজ আসেনি, সাধারণত সে কামায় করেনা, হয়তো শরীর-টরীর খারাপ হয়ছে। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে, তার ওপর আবার কিছু খাওয়া হয়নি, তাই তিনি তাড়াতাড়ি জামাকাপড় বদলে কলেজ যাওয়ার জন্য তৈরি হতে লাগলেন। কিন্তু দরজা খুলতেই তিনি সামনে দেখলেন দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ মাঠ! কোথায় সেই শহরের পিচঢাকা রাস্তা! কথায় সেই রাহুলের চায়ের দোকান, যেখানে সারাদিন ধরে রেডিও বাজতো! সেই ভিখারিটাই বা কোথায়, যে তার বাড়ির সামনে বাটি হাতে বসে থাকতো!

তিনি বেশ কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। বেশ কিছুক্ষণ পর তার মনে হলো, তিনি হয়তো স্বপ্নের জগৎ থেকে এখনও বেড়িয়ে আসতে পারেননি। নিজের হাতে চিমটি কেটে পরোখ করে নিলেন। কিন্তু হ্যাঁ, চিমটিটা তিনি খুব ভালোভাবেই অনুভব করতে পারলেন। ঘরে ঢুকে ভাবার চেষ্টা করবেন বলে পেছনে ঘুরলেন, কিন্তু কোথায় ঘর! তার চারপাশে সেই দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ। হাতে দিকে তাকিয়ে দেখলেন, তার হাতে আর ব্যাগ নেই, তার জায়গায় আছে একটা লাঠি। পাশে তাকিয়ে দেখলেন পরে আছে একটা সাইকেলের টায়ার। এমন সময়ে পিঠে পেছন থেকে একটা সজোরে আঘাত খেলেন, তাকিয়ে দেখেন, অর্ক দাঁড়িয়ে আছে। এবার তিনি আসতে আসতে চিনতে পারলেন, এটা তো তাদের গ্রামের সেই মাঠ, যেখানে তিনি তার বন্ধুদের সাথে খেলতেন। দূরে ভালো করে চেয়ে দেখলেন, ওইতো মাঠের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে সেই নদী, যেখানে তিনি ছোটবেলায় চান করতেন। কিন্তু, এতো বছর আগেকার ঘটনার হঠাৎ বাস্তবে পুনরাবৃত্তির কারণ তিনি বুঝতে পারলেননা!

খাবার দেওয়ার ছেলেটি এসে ঘরের কলিং বেল বাজালো, কিন্তু কোন সারাশব্দ পেলনা। সে জানে, সাধারণত তার গল্পদাদু এই সময় ঘুমিয়ে থাকে, তাকেই ঘুম থেকে তুলতে হয়, তাই বার বার বেল বাজাতেই থাকলো। কোন সারাশব্দ না পেয়ে পাশের জানালায় উঁকি মারলো, দেখলো রজনীবাবু শুয়ে আছেন। অনেক ডাকাডাকির পরেও যখন তিনি উঠলেননা, তখন ছেলেটির মনে কিছু সন্দেহ হলো, তারপর সে লোকজন ডেকে নিয়ে এসে দরজা ভাঙ্গার ব্যবস্থা করলো। দরজা ভেঙ্গে ঢুকে দেখে, জানালার বাইরে থেকে ঘুমন্ত রজনীবাবু হিসেবে যেটা ভ্রম হয়েছিল, সেটা আসলে রজনীবাবুর প্রাণহীন অসাড় দেহ। মৃত্যুর আগের মুহূর্তে তিনি চেয়েছিলেন ছোটবেলায় ফিরে যেতে। মৃত্যুই তাঁর শেষ ইচ্ছা পূরণ করে দিলো।


2 Launchers recommend this story
launchora_img
More stories by Soumya Ranjan
সংক্রমণ

আসুন, এই সঙ্কটের মুহূর্তে সবাই বাড়িতে থেকে, গল্প পড়ে নিজেকেও বাঁচাই, দেশকেও বাঁচাই

41
দুর্গা দিলো বর

বাঙালি ও পুজোর প্রেম

79
মৃত্যুঞ্জয়ের রূপক...

বাঙালীর প্রিয় তিন ধরণের বিষয়- ভালোবাসা, ভূত ও পরকীয়া

64

Stay connected to your stories

ঘুম

225 Launches

Part of the Fantasy collection

Published on July 04, 2016

Recommended By

(2)

    WHAT'S THIS STORY ABOUT?

    Characters left :

    Category

    • Life
      Love
      Poetry
      Happenings
      Mystery
      MyPlotTwist
      Culture
      Art
      Politics
      Letters To Juliet
      Society
      Universe
      Self-Help
      Modern Romance
      Fantasy
      Humor
      Something Else
      Adventure
      Commentary
      Confessions
      Crime
      Dark Fantasy
      Dear Diary
      Dear Mom
      Dreams
      Episodic/Serial
      Fan Fiction
      Flash Fiction
      Ideas
      Musings
      Parenting
      Play
      Screenplay
      Self-biography
      Songwriting
      Spirituality
      Travelogue
      Young Adult
      Science Fiction
      Children's Story
      Sci-Fantasy
      Poetry Wars
      Sponsored
      Horror
    Cancel

    You can edit published STORIES

    Language

    Delete Opinion

    Delete Reply

    Report Content


    Are you sure you want to report this content?



    Report Content


    This content has been reported as inappropriate. Our team will look into it ASAP. Thank You!



    By signing up you agree to Launchora's Terms & Policies.

    By signing up you agree to Launchora's Terms & Policies.